[লেখাটি ২০০৯ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী সামহোয়ার ইন ব্লগে আমার একাউন্টে প্রকাশিত হয়েছিল]
বেশ কয়েকদিন পর ব্লগে ঢুকলাম। অনেক কিছু লিখতে চাই কিন্তু লেখার ঠিক আগ মুহূর্তে আর কিছু লিখতে পারিনা। যাই হোক সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছি, বিষয়ও শিক্ষা তাই শিক্ষা নিয়েই কিছু লিখি।
আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুরবস্থার কথা জানিয়ে শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারকে একটি চিঠি লিখেছিলাম। জানি না, স্যার চিঠিটা পেয়েছিলেন কিনা। তবে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ করাটা আমার কাছে বাতিকের মত। এই বাতিক যেকোন সময় আমাকে বিপদেও ফেলতে পারে। মূল কথায় আসি। ক্লাস এইট থেকে অল্প-স্বল্প দুনিয়ার জটিলতা যখন বুঝতে শিখলাম তখন অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে বইতে যা পড়েছি তার অনেক কিছুই বাস্তবতার সাথে একেবারেই মিলে না। ছোটকালে অর্জিত অনেক নীতিকথারই বাস্তবে কোন প্রয়োগ নেই। কিছুটা চোখ-কান খুলতে শুরু করেছে তাই আবিষ্কার করলাম আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা নেহাতই অযৌক্তিক। যেমন ইংলিশে একটি প্রশ্ন থাকত যার নাম ছিল Re-arrange। তো সেইখানে কিছু বাক্য ক্রম লংঘন করে সাজানো থাকত সেগুলো ক্রম অনুসারে সাজাতে হতো। ভাল। কিন্তু লক্ষ্য করলাম যে আমি বহু চিন্তাভাবনা করে সাজালেও খুব কমক্ষেত্রেই তা ঠিক হয়। কিছু বাক্যগুচ্ছকে কিন্তু অনেকভাবে সাজানো যেতে পারে কিন্তু না পরীক্ষকের কাছে যে সিকোয়েন্স আছে আমাকে হুবুহু সেই সিকোয়েন্সেই সাজাতে হবে এমনকি সেই উত্তরে বাক্যগুলো পড়াও হবেনা শুধুমাত্র বাক্যগুলোর নির্দেশক বর্ণ এ,বি এগুলোর সিকোয়েন্স দেখে মুল্যায়ণ করা হয়। এমনকি পুরো সিকোনয়েন্সে একটিমাত্র সিকোয়েন্স ভুল হলে তার পরের পুরোটাই ভুল হয়ে যাবে। কোন বাক্যের পরে কোন বাক্য তা না দেখে বরং পুরোটা একটি ক্রম হিসেবে দেখা হয় যা আসলে রিঅ্যারেন্জের মূল উদ্দেশ্য পুরণে কোনভাবেই সফল নয়।
কমিউনিকেটিভ ইংলিশের নামে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি সাহিত্য থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করা হয়। আর তথাকথিত কমিউনিকেটিভ ইংলিশ পড়ে প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি শেখা যায় না। ঠিক তেমনি ফিল ইন দ্য গ্যাপস করেও ইংরেজি শেখা দুষ্কর হয়ে পড়ে। তবে স্যারদের কষ্ট কমে উল্লেখযোগ্য হারে কেননা তারা এসে হাতে একটি শিট ধরিয়ে দিয়ে ক্লাস শেষে তা মিলিয়ে চলে যান। ইংলিশ আর শেখা হয় না।
লেখা বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। তারপরও আরও সমস্যার কথা না বলে হাঁপ ছাড়তে পারছি না। ইংলিশের ঐ সমস্যা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত জ্বালালেও ইসলাম শিক্ষার সমস্যা মাধ্যমিকেই ইতি টেনেছে। মাধ্যমিক শ্রেণীতে ধর্ম শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি ধর্ম সম্পর্ক জ্ঞান দান হয় বা ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জাগানো হয় তবে মাধ্যমিক শ্রেণীতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টির সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরণ তা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমদের সময় ৫০ নম্বর থাকত অবজেক্টিভে। সেখানে বেশিরভাগ প্রশ্ন থাকত এরকম-
#মিথ্যা কথা বলা কেমন অপরাধ?
ক.জঘন্য খ.জঘন্যতম গ.মারাত্মক ঘ.জঘন্যতর
#কোনটি অতি গর্হিত কাজ?
ক.প্রতারণা খ.মিথ্যা বলা গ.হিংসা করা ঘ.অন্যের ক্ষতি করা
এগুলোর উত্তর হবে যথাক্রমে জঘন্যতম ও প্রতারণা কারণ বইয়ে তেমনটি দেওয়া আছে। বাংলা ভাষার উপমা যদি অবজেক্টিভ প্রশ্ন হয়ে যায় তবে ছাত্রদের জন্য তা কতটা মগজ খাওয়ার প্রক্রিয়া। লেখক মনের মাধুরী মিশিয়ে উপমা-বাগধারা দিয়ে রচনা লিখবেন আর তা ক্ষেত্র বিশেষে প্রশ্ন হয়ে যাবে।তালিয়া। এরকম হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পাস করে আসতে হয়েছে আমাদের। পাঠকই বলুন এ ধরনের প্রশ্নের যৌক্তিকতা কতটুকু? এভাবে বইয়ের একেবারে ভেতর থেকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বহু প্রশ্ন করা হত যা কিনা বই পড়ার সময় পূর্বের কোন কথার রেশ ধরে এসেছে কিন্তু পরীক্ষায় তা একক প্রশ্ন হিসেবে আসত। এগুলোকে আবার বলা হত টেকনিক্যাল কোশ্চেন। না বুঝে অন্ধের মত আরবী মুখস্থ করে তা বিশদ উত্তরের মাঝখানে দিলে মার্কস বেঝি পাওয়া যেত। বড়ই আফসোস। আমাদের দুর্ভাগ্য। এধরণের শিক্ষাব্যবস্থা কোন অশিক্ষিত ব্যাক্তিরা করেন আমরা জানি না আর শিক্ষাব্যবস্থা একবার প্রচলিত হলে তা মনিটরিং করা হয় কিনা তাও প্রশ্ন। (চলবে)
বেশ কয়েকদিন পর ব্লগে ঢুকলাম। অনেক কিছু লিখতে চাই কিন্তু লেখার ঠিক আগ মুহূর্তে আর কিছু লিখতে পারিনা। যাই হোক সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছি, বিষয়ও শিক্ষা তাই শিক্ষা নিয়েই কিছু লিখি।
আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দুরবস্থার কথা জানিয়ে শ্রদ্ধেয় জাফর ইকবাল স্যারকে একটি চিঠি লিখেছিলাম। জানি না, স্যার চিঠিটা পেয়েছিলেন কিনা। তবে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অভিযোগ করাটা আমার কাছে বাতিকের মত। এই বাতিক যেকোন সময় আমাকে বিপদেও ফেলতে পারে। মূল কথায় আসি। ক্লাস এইট থেকে অল্প-স্বল্প দুনিয়ার জটিলতা যখন বুঝতে শিখলাম তখন অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম যে বইতে যা পড়েছি তার অনেক কিছুই বাস্তবতার সাথে একেবারেই মিলে না। ছোটকালে অর্জিত অনেক নীতিকথারই বাস্তবে কোন প্রয়োগ নেই। কিছুটা চোখ-কান খুলতে শুরু করেছে তাই আবিষ্কার করলাম আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এমন অনেক কিছুই রয়েছে যা নেহাতই অযৌক্তিক। যেমন ইংলিশে একটি প্রশ্ন থাকত যার নাম ছিল Re-arrange। তো সেইখানে কিছু বাক্য ক্রম লংঘন করে সাজানো থাকত সেগুলো ক্রম অনুসারে সাজাতে হতো। ভাল। কিন্তু লক্ষ্য করলাম যে আমি বহু চিন্তাভাবনা করে সাজালেও খুব কমক্ষেত্রেই তা ঠিক হয়। কিছু বাক্যগুচ্ছকে কিন্তু অনেকভাবে সাজানো যেতে পারে কিন্তু না পরীক্ষকের কাছে যে সিকোয়েন্স আছে আমাকে হুবুহু সেই সিকোয়েন্সেই সাজাতে হবে এমনকি সেই উত্তরে বাক্যগুলো পড়াও হবেনা শুধুমাত্র বাক্যগুলোর নির্দেশক বর্ণ এ,বি এগুলোর সিকোয়েন্স দেখে মুল্যায়ণ করা হয়। এমনকি পুরো সিকোনয়েন্সে একটিমাত্র সিকোয়েন্স ভুল হলে তার পরের পুরোটাই ভুল হয়ে যাবে। কোন বাক্যের পরে কোন বাক্য তা না দেখে বরং পুরোটা একটি ক্রম হিসেবে দেখা হয় যা আসলে রিঅ্যারেন্জের মূল উদ্দেশ্য পুরণে কোনভাবেই সফল নয়।
কমিউনিকেটিভ ইংলিশের নামে শিক্ষার্থীদের ইংরেজি সাহিত্য থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত করা হয়। আর তথাকথিত কমিউনিকেটিভ ইংলিশ পড়ে প্রকৃতপক্ষে ইংরেজি শেখা যায় না। ঠিক তেমনি ফিল ইন দ্য গ্যাপস করেও ইংরেজি শেখা দুষ্কর হয়ে পড়ে। তবে স্যারদের কষ্ট কমে উল্লেখযোগ্য হারে কেননা তারা এসে হাতে একটি শিট ধরিয়ে দিয়ে ক্লাস শেষে তা মিলিয়ে চলে যান। ইংলিশ আর শেখা হয় না।
লেখা বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে। তারপরও আরও সমস্যার কথা না বলে হাঁপ ছাড়তে পারছি না। ইংলিশের ঐ সমস্যা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত জ্বালালেও ইসলাম শিক্ষার সমস্যা মাধ্যমিকেই ইতি টেনেছে। মাধ্যমিক শ্রেণীতে ধর্ম শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি ধর্ম সম্পর্ক জ্ঞান দান হয় বা ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি শ্রদ্ধা জাগানো হয় তবে মাধ্যমিক শ্রেণীতে ইসলাম শিক্ষা বিষয়টির সিলেবাস ও প্রশ্নের ধরণ তা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আমদের সময় ৫০ নম্বর থাকত অবজেক্টিভে। সেখানে বেশিরভাগ প্রশ্ন থাকত এরকম-
#মিথ্যা কথা বলা কেমন অপরাধ?
ক.জঘন্য খ.জঘন্যতম গ.মারাত্মক ঘ.জঘন্যতর
#কোনটি অতি গর্হিত কাজ?
ক.প্রতারণা খ.মিথ্যা বলা গ.হিংসা করা ঘ.অন্যের ক্ষতি করা
এগুলোর উত্তর হবে যথাক্রমে জঘন্যতম ও প্রতারণা কারণ বইয়ে তেমনটি দেওয়া আছে। বাংলা ভাষার উপমা যদি অবজেক্টিভ প্রশ্ন হয়ে যায় তবে ছাত্রদের জন্য তা কতটা মগজ খাওয়ার প্রক্রিয়া। লেখক মনের মাধুরী মিশিয়ে উপমা-বাগধারা দিয়ে রচনা লিখবেন আর তা ক্ষেত্র বিশেষে প্রশ্ন হয়ে যাবে।তালিয়া। এরকম হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিয়ে পাস করে আসতে হয়েছে আমাদের। পাঠকই বলুন এ ধরনের প্রশ্নের যৌক্তিকতা কতটুকু? এভাবে বইয়ের একেবারে ভেতর থেকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বহু প্রশ্ন করা হত যা কিনা বই পড়ার সময় পূর্বের কোন কথার রেশ ধরে এসেছে কিন্তু পরীক্ষায় তা একক প্রশ্ন হিসেবে আসত। এগুলোকে আবার বলা হত টেকনিক্যাল কোশ্চেন। না বুঝে অন্ধের মত আরবী মুখস্থ করে তা বিশদ উত্তরের মাঝখানে দিলে মার্কস বেঝি পাওয়া যেত। বড়ই আফসোস। আমাদের দুর্ভাগ্য। এধরণের শিক্ষাব্যবস্থা কোন অশিক্ষিত ব্যাক্তিরা করেন আমরা জানি না আর শিক্ষাব্যবস্থা একবার প্রচলিত হলে তা মনিটরিং করা হয় কিনা তাও প্রশ্ন। (চলবে)